বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ করছে দেশের প্রধান বৈদেশিক শ্রমবাজার সৌদি আরব। জনশক্তি রপ্তানি প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও সহজ করতে শিগগির ঢাকাস্থ সৌদি দূতাবাসে নিয়োগ দেওয়া হবে লেবার অ্যাটাশে বা জনশক্তি রপ্তানি সহায়তাকারী। সৌদি আরবে বর্তমানে ২০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি কর্মরত রয়েছে।
টানা ৭ বছর বন্ধ থাকার পর সৌদি আরবের শ্রমবাজার বাংলাদেশিদের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে। মাত্র ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা অভিবাসন ব্যয়ে বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী যাবে সৌদিতে। কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করার বিষয়ে কারিগরি বিশেষজ্ঞসহ একটি প্রতিনিধি দল ফের বাংলাদেশে আসবে।
২০০৯ সালের আগে বিভিন্ন সরকারের সময়ে অনিয়ন্ত্রিত ও অপরিকল্পিতভাবে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা অভিবাসন ব্যয়ে চাহিদার চেয়ে বেশি কর্মী সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গিয়েছে। এই ব্যয় তুলতে গিয়ে অনেক কর্মী অনৈতিক কাজে জড়িয়ে যায়। বিষয়টি সে দেশের সরকারের নজরে এলে তারা বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ রাখে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া স্বচ্ছ ও সহজ করতে গত সোমবার এই লেবার অ্যাটাশে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া অনুমোদন করেছে সে দেশের মন্ত্রিপরিষদ। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য যেসব দেশের দূতাবাস এই সেবার আওতায় পড়বে সেগুলো হলো মিসর, ভারত, ফিলিপাইন, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও শ্রীলংকা।
গত ৭ নভেম্বর সৌদি রাজধানী রিয়াদের আল-ইয়ামামা প্রাসাদে বাদশা সালমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের সাপ্তাহিক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে সুপারিশের জন্য তা অর্থনৈতিক পরিষদ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়ন বিভাগে পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি দেশের দূতাবাসের অধীনে নিয়োগপ্রাপ্তরা কাজ করবে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় একটি পত্রিকার বরাত দিয়ে সৌদি গেজেট জানায়, জনশক্তি রপ্তানিতে বিভিন্ন দেশে কিছু এজেন্ট কাজ করে। এই এজেন্টদের সুযোগ নিয়ে অনেকে অবৈধভাবে মানবপাচারের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। যা একাধারে দুই দেশের সম্পর্কের জন্যই তিকর। এ সমস্যা সমাধানের জন্য মন্ত্রিপরিষদ এই জনশক্তি রপ্তানি সহায়তাকারীদের নিয়োগ দিতে যাচ্ছে। নিয়োগপ্রাপ্তরা দ কর্মী সংগ্রহ ও বাছাই করতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করবে।
গত জুলাইতে সৌদি গেজেটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, যে সব দেশ থেকে সৌদি আরব জনশক্তি আমদানি করছে সে সব দেশে জনশক্তি রপ্তানি সহায়তাকারী নিয়োগ দেওয়ার কথা ভাবছে সৌদি শ্রম ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়।
উল্লেখ্য, ভিসা কেনাবেচা বন্ধ করার জন্য সৌদি সরকার কঠোর হয়েছে। সৌদি আইনে কেউ ভিসা ট্রেডিং করলে ১৫ বছরের কারাদ-ে দ-িত হবেন। সৌদি আরবে কম অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী পাঠানো শুরু হলে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করবে বলে মনে করেন প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। আমাদের সময়কে তিনি বলেন, আমরা আশা করছি সৌদি আরবের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশেও কর্মীরা নামমাত্র অভিবাসন ব্যয়ে যেতে পারবেন।
জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া ও তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে একটি ‘জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিটি’ গঠন করার বিষয়ে দুই দেশই একমত হয়েছে। এই কমিটি আলোচনার ভিত্তিতে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়ন করবে।
পাঠকের মতামত: